বহুল আলোচিত লক্ষীপুর জেলার সদর থানাধীন এলাকায় স্কুলছাত্রী স্মৃতি রানী সীমাকে (১৩) গণধর্ষণ ও হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ১০ বছর যাবত পলাতক আসামি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য মোঃ সাদ্দাম হোসেন রহিম‘কে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব-৩।
র‍্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে জঙ্গি, চিহিৃত সন্ত্রাসী, মানবপাচারকারী, অপহরণকারী, জালনোট ব্যবসায়ী সহ বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর মামলার আসামী গ্রেফতার করে আসছে।  বিভিন্ন ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য র‍্যাব সদা সচেষ্ট রয়েছে। এছাড়াও  যাবজ্জীবন, মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী এবং বিভিন্ন ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

লক্ষীপুর জেলার সদর থানাধীন এলাকায় জনৈক কৃষ্ণলাল দেবনাথ তার স্ত্রী, পুত্রবধু এবং ০৩ নাতনীদের নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। গত ১৯/০৭/২০১২ তারিখ কৃষ্ণলাল এর বাড়িতে মুখোশ পরে ১৪-১৫ জন ডাকাত দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রবেশ করে। তারা কৃষ্ণলাল এর পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। এ সময় তারা কৃষ্ণলাল দেবনাথ, তার স্ত্রী গীতা রানী ও পরিবারের সদস্যদের দেশীয় অস্ত্রদ্বারা বেদড়কভাবে পিঠিয়ে জখম করে একটি রুমে আবদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে তারা কৃষ্ণলাল এর নাতনী ভিকটিম সীমা (১৩) কে একটি কক্ষে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। শেষে ডাকাত দলটি স্বর্ণালংকারসহ প্রায় ৮০ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতরা চলে যাওয়ার পর ভিকটিমের পরিবারের চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন সীমা ও আহতদের স্থানীয় চন্দ্রগঞ্জ ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভিকটিম স্মৃতি রানী সীমা মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় কৃষ্ণলাল দেবনাথ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ে ১৪-১৫ জনকে আসামি করে ডাকাতি, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে সদর থানায় মামলা করেন।

উক্ত ঘটনার তদন্ত শেষে ২৫ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করে। উক্ত মামলার ২০ জন আসামী বিভিন্ন সময়ে আইন শৃংখলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়। মামলার দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৪ সালে বিজ্ঞ আদালত ১৫ জনকে খালাশ প্রদান করেন এবং ১০ জন আসামীর মৃত্যুদন্ড রায় ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টে আপীল করা হলে ০২ জন আসামীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং বাকী ০৮ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল থাকে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ০৪ জন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে ০১ জন পলাতক থেকে যায়। উক্ত পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে র‍্যাব গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২৪/০২/২০২৪ তারিখ ১৮০০ ঘটিকায় র‍্যাব-৩ এর একটি চৌকশ আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বহুল আলোচিত লক্ষীপুরের স্কুলছাত্রী স্মৃতি রানী সীমাকে গণধর্ষণ ও হত্যার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় মৃত্যুদন্ড সাজাপ্রাপ্ত দীর্ঘ ১০ বছর যাবত পলাতক আসামি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সদস্য ১। মোঃ সাদ্দাম হোসেন @ রুবেল @ রহিম (৩৭), পিতা-শাহ আলম, সাং-ধনাপুর আনামিয়া সরদার বাড়ী, থানা-সোনাইমুড়ি, জেলা-নোয়াখালীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

ধৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে ডাকাত দলের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে নোয়াখালী, লক্ষীপুর, কুমিল্লাসহ আন্তঃজেলা ডাকাতি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতো। তারা ডাকাতির জন্য পূর্ব হতে পরিকল্পনা করে ডাকাতির স্থান নির্ধারণ করে সবাই এক জায়গায় মিলিত হয়ে সুযোগ বুঝে ডাকাতি কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ডাকাতি কালে তারা হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের নৃশংস কর্মকান্ড করতো। উক্ত ডাকাত দলটি বিভিন্ন সময়ে কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষীপুর এলাকায় ১০-১২ টি বাড়িতে ডাকাতি কার্যক্রম করেছে বলে জানায়।

ধৃত সাদ্দাম ছোট বেলা থেকে বেপরোয়া জীবন যাপন করত। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর সে বখাটে ও উৎশৃঙ্খল ছেলেদের সাথে চলাফেরা শুরু করে। একপর্যায়ে সে ডাকাত দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়। দীর্ঘ ১ বছর যাবৎ ডাকাতি কার্যক্রমে সক্রিয় ভ‚মিকা পালন করে আসছিল। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে ০২ বছর ০৬ মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পায়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে এলাকা ছেড়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পলাতক জীবনযাপন করে আসছে। ২০১৪ সালে ঢাকা জেলার  তুরাগ থানাধীন কামারপাড়া এলাকায় বসবাসের পাশাপাশি গুলিস্তান এয়ারপোর্ট রোডে ৩নং বাসে নিজেকে রহিম নামে পরিচয় দিয়ে হেল্পার হিসেবে কাজ করে। যাত্রীবাহী পরিবহনে থাকাকালীন সময়ে একজন গামের্ন্টস কর্মীর সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। ২০১৬ সালে বিবাহের পর ধৃত আসামী গাজীপুর জেলার গাছা থানাধীন চান্দুরা এলাকায় নতুন বিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে নিজের আসল নাম পরিবর্তন করে সোহেল পরিচয় দিয়ে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে। অতপর সে গুলিস্তান এয়ারপোর্ট রোডে ৩নং বাস পরিবর্তন করে ঢাকায় আজমেরী পরিবহনে চালক হিসেবে কাজ করে আসছিল। নিজেকে আত্নগোপনে রাখার জন্য সে তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে নিজেকে পরিচয় প্রদান করে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ পলাতক জীবন যাপন করে আসছে।
ধৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।